সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু—সব ক্ষেত্রেই ফল উপকারী খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। ফল হলো প্রকৃতি-প্রদত্ত এক আশীর্বাদ। এটি সুস্বাদু ও সহজপ্রাপ্য। তবে এই আশীর্বাদ অভিশাপে রূপ নেয়, যদি এটি গ্রহণের সময় ও পদ্ধতি সঠিক না হয়। প্রায় সবার মাঝেই একটি ভ্রান্ত ধারণা হলো, ফল যেকোনো সময় কেটে খাওয়া যায়। কিন্তু ফল গ্রহণের সুনির্দিষ্ট সময় অনুসরণ করা না হলে ফল থেকে অপকারই বেশি হয়। তাই ফল গ্রহণের সঠিক সময় সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার।

ফল গ্রহণের উপযুক্ত সময় : 

ভোরবেলা অভুক্ত অবস্থায় 

ফলের সরল শর্করা ভালোভাবে শোষণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় প্রয়োজন। তাই ভোরবেলা অভুক্ত অবস্থায় অথবা দুটি আহারের মধ্যবর্তী সময় হলো ফল গ্রহণের উপযুক্ত সময়। কারণ, এই উভয় অবস্থায় বিভিন্ন প্রকার অ্যানজাইম খাদ্য পরিপাকে দ্রুত কাজ করে। দুই আহারের মধ্যবর্তী সময়ে অথবা অভুক্ত অবস্থায় ফল গ্রহণ করা হলে ফলের সব পুষ্টি উপাদান, আঁশ ও সরল চিনি দেহে সহজে পরিপাক হয় এবং ফল থেকে পাওয়া উপকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। অভুক্ত অবস্থায় ফল খেলে চুল পাকা, চুল পড়া, চোখের নিচের কালো দাগসহ নানাবিধ সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়।

আহারের ঠিক পরেই ফল গ্রহণ করা ঠিক নয়। ফল মুখ থেকে সরাসরি পাকস্থলীতে যাওয়ার পথে অন্য খাবার দিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলে খাবার পচে এসিড তৈরি হয়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আহারের কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর ফল গ্রহণ করা উচিত। ডায়াবেটিস ও এডিটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এ সময় হলো আহারের দুই ঘণ্টা পর বা আহারের এক ঘণ্টা আগে।

ব্যায়ামের আগে বা পরে 

ব্যায়ামের ঠিক আগে বা পরের সময়টি ফল গ্রহণের উপযুক্ত সময়। ফলের সরল শর্করা ব্যায়ামের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে এবং ব্যায়ামের পর দেহে শক্তির যে ক্ষয় হয়, তা পূরণেও ভূমিকা রাখে।

ফল গ্রহণের নিষিদ্ধ সময় 

রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে 

বিছানায় যাওয়ার খুব কাছাকাছি সময়ে ফল গ্রহণ ঠিক নয়। এ সময় ফল রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এটি দেহে ইনসুলিনের মাত্রার পরিবর্তন করে। এই উভয় অবস্থাই আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। রাতে ফল গ্রহণের সঠিক সময় হলো বিছানায় যাওয়ার ঠিক তিন ঘণ্টা আগে।

ওজন নিয়ন্ত্রণের সময় 

যখন আমরা ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় থাকি, তখন দুপুরের আহারের পর যেকোনো ফল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ, এ অবস্থায় দেহে যে ক্যালরির ঘাটতি হবে, তা পূরণে দেহের সঞ্চিত চর্বি ব্যবহৃত হবে।

ফল গ্রহণের কিছু সাধারণ নিয়ম 

ফল গ্রহণের কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে ফল থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টি পাওয়া যায়। এর কয়েকটি নিয়ম নিচে দেওয়া হলো :

  • একই সময়ে অনেক ফলের সমাহার আহারে রুচি বৃদ্ধি করবে।
  • প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কাপ ফল খাওয়া জরুরি।
  • সাধারণত ফল গ্রহণের এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত ক্ষুধা নিবৃত্ত থাকে। এর মধ্যে আবার ক্ষুধা অনুভব হলে মূল আহারের অসম্পূর্ণতাকে দায়ী করতে হবে।
  • এসিডিটি বা পরিপাকজনিত অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে ফলকে দই বা অল্প লবণের সঙ্গে গ্রহণ করা যায়।
  • ফলকে বড় টুকরো করে কেটে সালাদের সঙ্গে গ্রহণ করা যায়।

 


No comments so far.

Leave a Reply