নভেম্বর চলে গেলেই জাঁকিয়ে শীতপড়া শুরু হবে। আর ঠিক তখনই প্রয়োজন পড়বে শরীরকে ভেতর থেকে গরম রাখার। তো এই কাজটা কীভাবে করবেন সে বিষয়ে কোনও ধরণা আছে কি? বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের শরীরের সচলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে জ্বালানীর উপর। অর্থাৎ ঠিক ঠিক খাবার খেলে শরীর ঠিক থাকবে, আর যদি ঠিক মতো জ্বালানী সরবরাহ করতে না পারেন, তাহলেই ব্রেক ডাউন। সেই কারণেই তো আসন্ন শীতকালে সুস্থ-সবল থাকতে নিজের ডায়েট প্ল্যানের দিকে একবার নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে একটু বদল আনতেও পিছনা হবেন না যেন!

নিশ্চয় ভাবছেন ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে আদর্শ ডায়েট কী বতে পারে, তাই তো? তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে যে খাবারগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল…

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এমন খাবার
শীতকালে ঠাণ্ডা লেগে শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা সবথেকে বেশি থাকে। তাই এইসময় শরীরকে চাঙ্গা রাখতে সবুজ শাক-সবজি, লেবু, কমলা লেবু, টমেটো, মাছ, দই, ঘি, হোল গ্রেন খাবার প্রভৃতি বেশি করে খেতে হবে। কারণ এই খাবারগুলি শরীরে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে তুলবে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না। প্রসঙ্গত, এই সময় যতটা সম্ভব ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলবেন। কারণ হজম হতে সময় লাগবে এমন খাবার বেশি করে খেলে একদিকে যেমন নানাবিধ পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও থাকবে।

২. পানি খেতে হবে বেশি করে
শীতকালে সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক গ্লাস গরম পানিতে পাতি লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এই পানীয়টি নিয়মিত খেলে হজম ক্ষমতার যেমন উন্নতি ঘটবে, তেমনি শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দূর হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে উঠবে যে ঠাণ্ডার কারণে আপনার কোনও কষ্টই হবে না। এই সময় আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হল তাপমাত্র কমে যাওয়ার কারণে শীতকালে আমাদের পানির তেষ্টা খুব কমে যায়। ফলে শরীরে পানির ঘাটতি হওয়ার কারণে নানাবিধ সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই এই সময় ভুলেও ৩-৪ লিটারের কম পানি খাওয়া চলবে না।

৩. খেতে হবে ঘি এবং আঁশ রয়েছে এমন খাবার
বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, শীতকালে আঁশ জাতীয় খাবার বেশি করে খেলে হজম প্রক্রিয়া বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে শরীরের ভেতরের তাপমাত্র বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাইরের ঠাণ্ডা সেভাবে শরীরকে কাবু করতে পারে না। প্রসঙ্গত, এই সময় প্রতিদিন এক চামচ করে ঘি খাওয়ারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ এই খাবারটি নিয়মিত খেলে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে, ওজন বাড়ার আশঙ্কা কমে এবং শরীর গরম থাকে।

৪. বাদাম এবং কিশমিশ খেতে হবে নিয়ম করে
শীতের ব্রেকফাস্ট যেন কোনও দিনই বাদাম এবং কিশমিশ ছাড়া শেষ না হয়। কারণ এই ধরনের খাবারগুলি সারা দিন শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, বাদাম এবং কিশমিশ আরও নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। তাই শীতকালে ভুলেও বাদাম আর কিশমিশের সঙ্গ ছাড়া কখনই চলবে না কিন্তু!

৫. তুলসি এবং আদা
আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ থেকে জানতে পারা যায়, শীতকালে শরীরকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখতে তুলসি এবং আদার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ এই দুই প্রাকৃতিক উপাদানের শরীরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিভাইরাল প্রপার্টিজ, যা শীতের কামড় থেকে বাঁচাতে সব দিক থেকে সাহায্য করে থাকে।

৬. সবুজ শাক-সবজি
শীতকাল মানেই সবজি বাজারে রঙের পরশ! আর সেই রং যাতে আপনার খাবারের প্লেটেও লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর সেই কারণেই তো প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে গাজর, পালং শাক, বিনস, টমেটো সহ আরও নানা সব সবজিকে। আসলে এই সব প্রাকৃতিক উপাদানগুলির বেশিরভাগই ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিনে ভরপুর থাকে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে এই দুটি উপাদান শরীরকে ভিতর এবং বাইরে থেকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 


No comments so far.

Leave a Reply