এই ব্যস্ত শহরে শীতের সকালে মিষ্টি রোদ আর ঠাণ্ডা বাতাসের ছোঁয়া সবাইকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও অন্য একটা কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায়। প্রায় এক বছর পর ফিরে আসা সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর ঝরে পড়া শিউলি ফুলের সুগন্ধ যেন বিমোহিত করে রাখে সারাক্ষণ, প্রফুল্ল করে তোলে মন-শরীর। কিন্তু এই আবহাওয়া কি মানিয়ে চলতে পারবে আপনার মন ও ত্বক? এ সময় মুখের ত্বক ও চুলের রুক্ষতা, শুষ্কতা, চোখ, ঠোঁট, পুরো শরীরে নানারকম অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। কী করবেন? চলুন জেনে নিই কিছু তথ্য।

মুখের ত্বক

শীতকালে ত্বক নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। ত্বক চায় একটু আলাদা যত্ন। ব্যস্ততার এই যুগে কারই বা সময় আছে আলাদাভাবে ত্বকের একটু বেশি যত্ন নেয়ার। কিন্তু ঠিকমতো যত্ন না নিলে ত্বকের উজ্জ্বলতা হারায়, ত্বকের উপরিভাগ কালো হয়ে আসে এবং ত্বক ফেটে যায়।

যারা সারাদিন বাইরে কাজ করেন, তাদের ত্বকে গাড়ির ধোঁয়া ধুলোবালি  ইত্যাদি জমা হয়। সন্ধ্যা বা রাতে বাড়ি ফেরার পর সারাদিনের জমে থাকা ময়লা এবং ব্যবহৃত মেকআপ ভালো করে ত্বক থেকে উঠিয়ে দেয়া জরুরি। মূলত এই কারণেই রাতে রূপচর্চার প্রয়োজন। অস্বাভাবিক পরিবেশ দূষণে মুখে যা ধুলাবালি জমা হয় এগুলো ত্বকে জমিয়ে রেখে দিলে ত্বকের করুন অবস্থার কথা আশা করি বলার অপেক্ষা রাখে না। ময়লা তুলে না ফেললে ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ত্বক স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারবে না। যার ফলে ব্রণ, ব্ল্যাককহেডস, হোয়াইট হেডস বা ত্বকের আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ঘুমন্ত অবস্থায় মেটাবলিজমও (Metabolism) কম হয়, ত্বক থাকে অনেক আরামে। তাছাড়া ৭-৮ ঘণ্টা টানা ঘুমানোর কারণে ক্রিম কার্যকর হবার মতো সময় পায়। যেটা দিনের বেলা হাজার কাজকর্ম হইচই, খাওয়া-দাওয়ার মাঝে অসম্ভব। কাজেই ত্বকের পুষ্টি ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রসাধন ও পরিচ্ছন্নতা রাতে করাই যুক্তিযুক্ত। তবে দিনের কাজের মাঝে সময় করে নিয়ে দুই-একবার মুখ পরিষ্কার করে রাখলে ভালো হয়।

শীতের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করে নেয়া প্রয়োজন। এজন্য প্রথমে অলিভ অয়েল বা বেবি অয়েল দিয়ে মুখ ভালো করে ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুখটা মুছে ফেলুন। পরে ভালো কোনো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।

চোখের যত্ন 

রাতে রূপচর্চার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে চোখের যত্ন ঠিকমতো হচ্ছে কি না। চোখের ডার্ক সার্কেল কমাতে ঘুমানোর আগে কুরানো শশা বা আলু ঠাণ্ডা হলে ভালো বা ঠাণ্ডা টি-ব্যাগ চোখের উপর ১০-১৫ মিনিট রাখুন। মানসিক চাপের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে আমাদের চোখের উপর। স্ট্রেস বা টেনশন থেকে যথাসম্ভব দূরে, মনের আনন্দে থাকার চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত পানি খান, সময়মতো ঘুমান। চোখ নিমেষে হয়ে উঠবে ঝকঝকে, উজ্জ্বল।

ঠোঁটের যত্ন

আধা চা–চামচ মধু ও এক চা–চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন। চাইলে ব্যবহার করতে পারেন গ্লিসারিনও।

শরীরের যত্ন

পুরো শরীরেই রাতে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। সম্ভব হলে ঘুমানোর আগে কুসুম গরম পানিতে শরীর ধুয়ে নিন। সমপরিমাণ জলপাই তেল বা বডি অয়েল ও পানির মিশ্রণ গলা থেকে পা পর্যন্ত লাগাতে পারেন। যেকোনো ধরনের ত্বকেই এটি মানিয়ে যায়। এই মিশ্রণ লাগানোর পর ডিপ ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম লাগিয়ে নিতে পারেন। আবার তেল মালিশ করতে না চাইলে শুধু ডিপ ময়েশ্চারাইজিং ক্রিমও ব্যবহার করা যায়।

হাত ও পা

প্রতি রাতে পা ধুয়ে লোশন লাগিয়ে ঘুমাতে যান। রাতে পায়ে প্রথমে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ২ টেবিল চামচ কুসুম গরম অলিভ অয়েলের সাথে ১ চা চামচ লবণের মিশ্রণ তৈরি করে সেটা পায়ে ভালো করে মাসাজ করুন। এতে মৃতকোষ ঝরে যাবে, গোড়ালি নরম হবে, রক্ত চলাচল ভালো হবে। মুখের জন্য যে স্ক্রাব ব্যবহার করেন, তা দিয়েও মাসাজ করতে পারেন। ধুয়ে লোশন লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন। সারাদিন পর পা দুটোকে যথোপযুক্ত আরাম দিন। হাতের যত্নও নিতে পারেন একইভাবে। মুখ, হাত, পা যেকোনো মাসাজই করতে হবে হালকা হাতে, আলতোভাবে।

চুলের যত্ন 

যাদের বড় চুল, তারা বেণী করে নিন ঘুমানোর আগে। তাতে চুল সারা রাত ঘষা খাবে না। ছোট চুল হলে খোলা রেখে শুলেও অসুবিধা নেই। তেল মাসাজ করে শুলে ঘুম ভালো হবে।

নখের যত্ন 

নখ ফেটে বা ভেঙে যাবার সমস্যা কমাতে ঘুমানোর আগে হাত-পায়ের নখে জলপাই তেল (অলিভ অয়েল) ম্যাসাজ করে নিন। সারা রাত নখ আর্দ্রতা পাবে।

বিছানা ছাড়ুন সময় নিয়ে 

শীতের রাত গরমের চেয়ে একটু বেশিই দীর্ঘ হয়। এই দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকার ফলে মাংসপেশির কর্মক্ষমতা অনেকাংশেই শিথিল হয়ে যায়। দীর্ঘসময় একভাবে থাকার ফলে শরীরের পেশিগুলোর কর্মক্ষম হতে একটু সময় লাগে। তাই ঘুম ভাঙার পর বিছানা থেকে খুব তাড়াহুড়ো করে উঠবেন না। এতে মাংসপেশিতে টান পড়া বা খিঁচ ধরার সম্ভাবনা থাকে। তাই বিছানাতেই ধীরে ধীরে আপনার হাত-পা নাড়ান এবং বিছানা ছাড়ুন ধীরগতিতে।

কিছু পরামর্শ

কখনই মেকআপ না মুছে ঘুমাতে যাওয়া উচিত নয়। মেকআপ যখনই করুন, মুখ পরিষ্কার করতে হবে তা নাহলে ত্বকের ক্ষতি হবে।

কী ধরনের ক্রিম ব্যবহার করবেন সেটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কতটা ক্রিম ব্যবহার করেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কম ক্রিম ব্যবহার করতে হয়। তবে যাদের ব্রণ আছে তাদের নাইট ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশি পরিমাণে ক্রিম প্রয়োজন।

নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার (moisturizer) ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি।  যারা বাড়ির কাজ করেন, প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ও বলিরেখা পড়ে। তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার। এতে ত্বকে পুষ্টি যোগায়।

ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। পেট পরিষ্কার রাখার জন্যও পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রাতে খাওয়ার পর খেতে পারেন এক কাপ চায়নিজ জেসমিন টি, এতে শরীরে মেদ জমবে না।

নিয়মিত পরিচর্যা, সুষম খাবার, সুন্দর জীবনযাপন আপনাকে ভালো ও সুস্থ রাখবে আর সুস্থতা প্রতিফলিত হবে আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্যে। তাই আপনার বিরামহীন কর্মব্যস্ততার মধ্যেও ঘুমের আগে এটুকু ঘরোয়া পরিচর্যায় আপনি থাকবেন একদম সুস্থ, প্রাণবন্ত, সুন্দর।

শিজেং এর সৌজন্যে শুষ্ক ত্বকের যত্বে কোলাজেন ওয়াটার ফুল ময়েস্ট ইমালশন ক্রিম :

এটি একটি ময়শ্চারাইজিং ক্রিম যা ত্বকের সুরক্ষায় একটি সম্পূর্ণ নতুন স্তর তৈরি করে। রোজ মেরি এবং গ্রিন টি ছাড়াও ৪০ টিরও বেশি উপাদান আছে এই ক্রিমে। এই ক্রিম ব্যবহারে যে উপকারিতা পাওয়া যায় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :

  • ত্বক হাইড্রাইড করে
  • ত্বককে পরিস্কার করে
  • ত্বক রিপেয়ার করে
  • ত্বক ময়শ্চারাইজ করে
  • সূর্যের ইউভি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

 


No comments so far.

Leave a Reply