rosun-er-gunagun-garlic গুনে ভরা রসুন@chuijhal.com

রসুন একটি মসলা জাতীয় খাদ্য উপাদান। রান্নার মসলা হিসেবে রসুনের ব্যবহার সৃষ্টির শুরু থেকে চলে আসছে। রান্নায় স্বাদকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে শুধু নয়, রসুনের পুষ্টিগুণ রসুনকে পৌঁছে দিয়েছে মসলার অন্যতম তালিকার মধ্যে। তাই রান্নার পাশাপাশি রসুন স্বাস্থ্য ভাল রাখার ঔধষ হিসেবেও কাজ করে। অনেক বছর আগে থেকে রসুন ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতিই রসুনকে বিভিন্ন রোগ নিরায়মের জন্য ব্যবহার করে আসছে। খালি পেটে রসুন খেলে বিভিন্ন রোগ দূর হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধও গড়ে তুলা যায়। সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন এক কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। সকাল, বিকাল অথবা দুপুরে বা রাতেও খেতে পারেন। প্রতিদিন এক কোয়া রসুন খেলে আয়ু বাড়ে।

১) প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকঃ

গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর মত কাজ করে। সকালে নাস্তার পূর্বে রসুন খেলে এটি আরও উপকারিভাবে কাজ করে। বিশেষ করে খালি পেটে রসুন খাওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো উন্মুক্ত হয় এবং তখন রসুনের ক্ষমতার কাছে ব্যাকটেরিয়াগুলো হেরে যায়।

২) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ

অসংখ্য মানুষ যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তারা দেখেছেন, রসুন খাওয়ার ফলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের কিছু উপসর্গ ভাল দেখা যায়। এর কারন রসুন খাওয়ার ফলে তারা শরীরে ভাল পরিবর্তন দেখতে পায়।

৩) যক্ষ্মা প্রতিরোধকঃ

রসুনে এতো উপাদান যে যদি আপনার যক্ষ্মা বা টিবি জাতীয় কোন সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে সারাদিনে একটি সম্পূর্ণ রসুন কয়েক অংশে বিভক্ত করে বার বার খেতে থাকলে। যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে করা সম্ভাব।

৪) শ্বসনঃ

রসুন যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের কনজেশন, হাপানি, হুপিং কাশি ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। রসুনের মধ্যে সকল রোগ আরোগ্যের করার উপায় সৃষ্টিকারি উৎস বিদ্যমান রয়েছে।

৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ


রোগ-প্রতিরোধে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে নাস্তা শেষে এক কোয়া রসুন গিলে ফেলেন। চিবিয়ে খাবেন না, শুধু গিলে ফেলবেন। এর ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং ঋতু পরিবর্তনের সময় স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

৬) হজমের সমস্যা মুক্তিঃ

২/৩ টি রসুনের কোয়া কুচি করে সামান্য ঘিয়ে ভেজে নিন। এটি সবজির সাথে কিংবা এমনি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে করে হজমের নানা সমস্যা থেকে দূরে থাকবেন।এবং কোস্টকাঠিন্যের সমস্যা সমাধান হবে।

৭) জমে যাওয়া কফ থেকে মুক্তিঃ


রসুন কফের জন্য অনেক উপকারি ঔধষ। খুব সামান্য তেলে ১/২ কোয়া রসুন ভেজে তা ১ টেবিল চামচ মধুর সাথে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে খাইলে। এটা যদি নিয়মিত খান তাহলে বুকে জমে যাওয়া কফ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ।

৮) যৌনতা বৃদ্ধিতে রসুনের ভূমিকাঃ

প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েককোয়া কাঁচা রসুন খেলে শরীরের যৌবন দীর্ঘ স্থায়ি হয় । যারা পড়ন্ত যৌবনে চলেগিয়েছেন, তারা প্রতিদিন দু’কোয়া রসুন খাঁটি গাওয়া ঘি-এ ভেজে মাখন মাখিয়ে খেতে পারেন। তবে খাওয়ার শেষে একটু গরম পানি বা দুধ খাওয়া উচিৎ। এতে ভাল ফল পাওয়া যাবে। যৌবন রক্ষার জন্য রসুন অন্যভাবেও খাওয়া যায়। কাঁচা আমলকির রস দুই বা এক চামচ নিয়ে তার সাথে এক বা দুই কোয়া রসুন বাটা খাওয়া যায়। এতে স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের যৌবন দীর্ঘস্থায়ি হয়।

৯) হৃদপিন্ডের সুস্থতায়ঃ

হৃদপিন্ডের সুস্থতায় রসুন অনেক উপকার করে থাকে। রসুন কোলেস্টরল কমাতে খুবই সহায়ক। এই কারনে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কম থাকে সুতরাং হার্ট এর জন্য রসুন অনেক উপকারি।

 

১০) ক্যান্সের প্রতিরোধে রসুনঃ

কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে এই রসুন। গলব্লাডার ক্যান্সার হওয়া থেকেও মুক্ত রাখে। মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের ঝুকি কমায়। এমনকি রেক্টাল ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে। রসুন প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এই রসুন ইস্ট ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নিয়মিত রসুন সেবনে শরীরে সব ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়।

১১) ঠান্ডা ও জ্বরেঃ

প্রায়ই ঠান্ডা ও জ্বরে পড়েন এমন ব্যক্তিদের জন্য রসুন হতে পারে এক মহৌষধ। শরীর থেকে জ্বর আর ঠান্ডা দূর করতে প্রতিদিন দু-তিন কোয়া রসুন কাঁচা খেতে হবে। এ ছাড়া রান্না করা বা চায়ের সাথেও রসুন খেতে পারেন।

 

চোখের যত্নে রসুনঃ

রসুন চোখের ছানি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করে।আবার দাঁতের ব্যথা সারাতে রসুন সহায়তা করে থাকে।

১২) ত্বকের যত্নে রসুনের গুনঃ

রসুনের ওষধি গুণাবলী সম্পর্কে কম বেশি সবারই আমাদের জানা। হার্ট সুস্থ রাখা থেকে শুরু করে ওজন কমানো পর্যন্ত রসুনের ভূমিকা রয়েছে।আপনি কি জানেন ত্বকের যত্নেও রসুনের জুড়ি নেই। ত্বকের যত্নে রসুন! অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়? কিন্তু ব্রণ এবং ব্রণের দাগ নিমিষে দূর করে দিতে পারে এই রসুন। এক কথায় ত্বকের যত্নে রসুনের ব্যবহার অপরিসীম।

সতর্কবার্তা

 

রসুন যত উপকার ততটা ক্ষতিকর। দিনে ২ কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন খাওয়া যাবে না।

রান্নায় এটি ব্যবহার হলেও দিনে মাত্র ২ কোয়া রসুন ব্যবহার করতে হবে।

যাদের রসুন খাওয়ার ফলে এলার্জি হবার আশঙ্কা থাকে বা হয় তাদেরকে অবশ্যই কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

যাদের রসুন খাওয়ার ফলে মাথা ব্যথার সমস্যা হয়, বমির প্রাদুর্ভাব হয় বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দেয় তাদের জন্য কাঁচা রসুন না খাওয়াই ভাল।

আবার অতিরিক্ত খেলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হতেও পারে তাই বেশি রসুন খাওয়া ঠিক নয়।

আপনি চাইলে কাঁচা রসুন খাওয়ার পরিবর্তে রসুনের আচার খাবারের তালিকায় প্রতিদিন রাখতে পারেন।

 

 


Comments are closed.