দুনিয়াতে সম্ভবত মরিচই এক মাত্র ফল যা কামড়ালে পাল্টা কামড় দেয়। এই পাল্টা কামড়ের প্রতিক্রিয়া মরিচের জাতভেদে নানা ধরনের হতে পারে। কোনটা কামড় দেয়ার সাথে সাথে মুখের ভিতর জ্বালা শুরু হয়, কোনটা গলাধঃকরণ না করা পর্যন্ত টের পাওয়া যায়না, কোনটা জিহ্বার আগায় জ্বালা ধরিয়ে দেয়, কোনটা আবার সমস্ত মুখগহবরে আগুন…

লঙ্কা মুখে দেয়ার পর আমাদের যে ঝালের অনুভূতি হয়, তার কারণ ওই প্ল্যাসেন্টার গ্রন্থিগুলোর ভেতরে থাকা ‘ক্যাপসাইসিন’ নামের রাসায়নিক উপাদান। একটি কাঁচা লঙ্কা মুখে দেওয়ার পরে ক্যাপসাইসিন নামক ওই রাসায়নিক পদার্থ আমাদের মুখের লালার সঙ্গে মিশে যায় এরপর মুখ এবং জিহ্বায় থাকা ‘টিআরপিভি১’ রিসিপটরের সঙ্গে একত্রিত হয়। টিআরপিভি১ রিসিপটরই মূলত আমাদের জিহ্বার মধ্যে তীব্র দহনের বিষয়টি জানান দেয় এবং মস্তিস্ককে সঙ্কেত পাঠায় এবং মস্তিষ্ক আমাদের বোঝায় যে আমাদের মুখে আগুন জ্বলছে। আর তখনি শুরু হয় লঙ্কা কান্ড!
 
ঝাল খেতে যারা ভীষণ পছন্দ করেন তাদের জন্য বোম্বাই মরিচ বা নাগা মরিচ হলো অন্যতম পছন্দের একটি খাদ্য উপাদান। বহুল পরিচিত ও খাদ্যটির প্রতিদিন খাওয়া হলেও এর উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে আমরা ক’জন জানি?
 

 ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে

 
বোম্বাই মরিচে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরে ‘দ্বাররক্ষী’ হিসেবে কাজ করে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। একইসাথে বোম্বাই মরিচ বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করতে সাহায্য করে।
 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

 
বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। খেয়াল করে দেখবেন, বোম্বাই মরিচ খাওয়ার ফলে অনেক সময়ে বন্ধ নাক খুলে যায়। বোম্বাই মরিচে থাকা এই ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুব দারুনভাবে কাজ করে।

 

ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী

 
বোম্বাই মরিচে ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই। যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উৎপন্ন করতে সাহায্য করে থাকে বলে ত্বক অনেক সুস্থ থাকে।

 

জিরো ক্যালোরি

 
খুবই মজার ব্যাপার হচ্ছে, বোম্বাই মরিচে কোন ক্যালোরি নেই। অর্থাৎ একদম শূন্য ক্যালোরিযুক্ত একটি খাদ্য উপাদান হলো বোম্বাই মরিচ। আরো দারুণ তথ্য হলো, বোম্বাই মরিচ খাওয়ার পরে শরীরের মেটাবলিজম প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়! তাই আপনি যদি ডায়েটে থাকেন, তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশী করে বোম্বাই মরিচ যোগ করার চেষ্টা করুন।
 

রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে

 
যাদের ডায়বেটিসের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য বোম্বাই মরিচ অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। বোম্বাই মরিচ রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। তবে এমনটা মনে করবেন না যে, অতিরিক্ত মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরে বোম্বাই মরিচ খেলে সাথে সাথে কাজ করবে!
 

খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে

 
বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে, সেক্ষেত্রে বোম্বাই মরিচ খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়াও, সাধারণ সময়ে খাদ্য দ্রুত পরিপাক করতে সাহায্য করে বলে নিয়মিত কাঁচামরিচ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।

 

বোম্বাই মরিচ খাওয়া মানে মনমেজাজ ভালো

 
ঝাল কোন খাবার বিশেষ করে বোম্বাই মরিচ খাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক থেকে ‘এন্ডরফিনস’ নিঃসৃত হয়, যা মনমেজাজ ভালো ও চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে বোম্বাই মরিচ খাওয়ার পরে আপনি খুব ফুরফুরে ও আনন্দিত বোধ করবেন। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
 

ত্বকের ইনফেকশনের সমস্যায় কাজ করে থাকে

 
বোম্বাই মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার ফলে, শরীরের যেকোন অংশে ত্বকের ইনফেকশন হওয়া থেকে এটি প্রতিরোধ করে থাকে।

 

আয়রনপূর্ণ বোম্বাই মরিচ

 
যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশী করে বোম্বাই মরিচ যোগ করা জরুরি। কারণ প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান হিসেবে বোম্বাই মরিচে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন।
 

চোখের জন্য দারুণ উপকারী

 
ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা-ক্যারোটিন। যা সুস্থ চোখের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
 
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শুধুমাত্র স্বাদ বৃদ্ধির জন্যেই নয়, নিজেকে সুস্থ রাখার জন্যেও এখন থেকে বোম্বাই মরিচের আচার যোগ করুন।
 
আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি! 

Comments are closed.