গোলমরিচের আদিভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ। প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্যে মসলা হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লতাজাতীয় এ উদ্ভিদটির ফল শুকিয়ে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

 

এ ফলের রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ। এতে আছে ভিটামিন ‘এ’ ও ক্যালসিয়াম। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম গোলমরিচে আছে প্রোটিন ১১.৫ গ্রাম, ফ্যাট ৬.৮ গ্রাম, শর্করা ৮৯.২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৬০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৯৮ মিলিগ্রাম, আয়রন ১৬.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ ১৮০০ আইইউ, ভিটামিন বি১ ০.০৯ মি.গ্রা, ভিটামিন বি২ ০১.৪ মি.গ্রা. ও নিয়াসিন ১.৪ মিলিগ্রাম।

তবে পুষ্টিমান জাত ও উৎপাদনের স্থানের তারতম্যের জন্য কিছুটা পরিবতর্ন হতে পারে। গোলমরিচে আছে পাইপারিন নামক রাসায়নিক উপাদান, যা থেকে এর ঝাঁজাল স্বাদ এসেছে।গোলমরিচ শুধু তরকারির স্বাদই বাড়ায় না, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিষেধকের ভূমিকাও রাখে।

কিন্তু শুধু স্বাদই নয়, গোলমরিচের কয়েকটি উপকারিতাও রয়েছে। আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনে গোলমরিচের অজানা ৭ উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হল-

১। গোলমরিচ পেটে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা বাড়ায়। তাই এটি হজমে সাহায্য করে। আর হজম ঠিক থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়েরিয়ার মতো সমস্যাকে এড়ানো যায়। পেটে গ্যাস হওয়া রুখতেও গোলমরিচের জুড়ি মেলা ভার।গোলমরিচ হজমে, জ্বরে, পেট ফাঁপা ও গ্যাস দূর করতে বিশেষ সহায়তা করে।

২। গোলমরিচ খেলে ঘাম বেশি হয়। ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন কমতে থাকে। গোলমরিচের বাইরের আবরণ দেহের চর্বিজাতীয় কোষ ভাঙতে সাহায্য করে। তাই ওজন কমানোর চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়। শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যালস বের করে দিতে সাহায্য করে। ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত করে তা প্রতিরোধ করে।

৩। গোটা মরিচের খোসা অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। ফলে গোলমরিচ দেওয়া খাবার খেলে কমতে থাকে শরীরের অতিরিক্ত মেদ। গোলমরিচ কফ ও বায়ুনাশক, রুচিবর্ধক এবং কৃমিনাশক। পানিতে এর গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে আমাশয়ে উপকার হয়।

৪। যারা অতিরিক্ত মাত্রায় ধূমপান করেন, গোলমরিচ তেলের গন্ধ নিয়মিত সেবন করলে বা সরাসরি ভাবে গোলমরিচ খেলে ধূমপানের অভ্যাস কমতে থাকে।

৫। ত্বকের রোগ থাকলে তার চিকিৎসাতেও কাজে লাগে গোলমরিচ। গোলমরিচ গুঁড়া করে, স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর হয়। ফলে ত্বকে সহজে অক্সিজেন চলাচল করতে পারে। এছাড়া পিগমেন্টেশন ও অ্যাকনি দূর করতেও সাহায্য করে গোলমরিচ। ত্বক ভালো রাখে গোলমরিচের তেল। বিশেষ করে ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

৬।ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিরাময় করে। নাক বন্ধ থাকা, হাঁপানি ইত্যাদি সারাতে সাহায্য করে গোলমরিচ। এক কাপ গরম পানিতে এক টেবিল চামচ গোলমরিচ এবং দুই টেবিল চামচ মধু দিয়ে খেলে শ্লেষ্মা দূর হয়। গরম দুধে গোলমরিচ আর চিনি মিশিয়ে খেলে সর্দি-কাশি সারে।

৭। দাঁতে ক্যাভিটি বা ব্যথা থাকলে, গোলমরিচ সেই ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে  দাঁতের রোগের জন্য লবণ ও গোলমরিচ চূর্ণ মিশিয়ে দাঁত মাজলে ভালো হয়।

৮। প্রচুর আন্টিঅক্সিডেন্ট আছে গোলমরিচে, যা উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। শুধু তা-ই নয়, মরিচের ঝাল কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। মরিচে বিদ্যমান ‘ক্যাপ্সাইসিন’ শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এলডিএল কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেইন স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ।পরিমিত পরিমাণে মরিচের ঝাল দেহে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে এসব রোগের হাত থেকে হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।


Comments are closed.