ডিসেম্বর মাস।শীত জেকে বসেছে ভালো ভাবেই। শীতকাল কেবল কম্বলের নিচে অলস সকাল, ভাপা পিঠা খাওয়া এবং ব্যাডমিন্টন খেলাই নয়, এটি সাথে করে নিয়ে আসে কিছু স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাও।

 

শীতকালে সাধারণত পায়ের নিচের চামড়া শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে ফেটে যায়। এটি শুরু হয় কিছু হালকা দাগ দিয়ে কিন্তু ধীরে ধীরে পরিণত হয় ব্যথাদায়ক শুষ্কতা এবং রুক্ষতায়। এ থেকে গোড়ালির ত্বক ফেটে যায়।  ঠাণ্ডা পরিবেশ এবং স্বল্প আর্দ্রতার কারণে শীতকালে এটি ঘটে থাকে।

তাই আপনি যেন এই সমস্যায় না ভোগেন, তা নিশ্চিত করতে জেনে নিন এই সমস্যা প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ টিপসঃ

যথেষ্ট পানি পান করুনঃ শীতকালে সাধারণত পানি কম খাওয়া হয়। পানিস্বল্পতা শুষ্ক ত্বকের অন্যতম কারণ। তাই নিশ্চিত করুন যে আপনি যথেষ্ট পানি পান করছেন।

গোসলের সময় যত্নঃ হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। গোসলের স্থান পরিষ্কার রাখুন, গোসল শেষ করে ভালোভাবে পা শুকিয়ে নিন। গোসলের আগে যে কোন ধরণের তেল যেমন নারকেল তেল, অ্যালমন্ড তেল ইত্যাদি ব্যবহার ত্বকের শুষ্কতা রোধে সাহায্য করবে। গোসল শেষ করে ভালো কোন ময়েসচারাইজার অথবা ক্রিম দিতে ভুলবেন না।

ভালো জুতো পরুনঃ সবসময় আরামদায়ক জুতো ব্যবহার করুন এবং টাইট জুতো পরা থেকে বিরত থাকুন। সবসময় চেষ্টা করুন এগুলো পরিষ্কার রাখার।

শীতের বাড়তি যত্নঃ গোসলের পরে এবং রাতে ঘুমোবার আগে গ্লিসারিন, ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ভালো কোন ক্রিম বা ময়েসচারাইজার অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।

 

এছাড়াও, আপনি যদি ইতিমধ্যে এই সমস্যার ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন তবে কিছু জিনিস করতে পারেন পায়ের ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে। যেমনঃ

  •   কুসুম গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন দিয়ে তাতে প্রতিদিন দশ-পনের মিনিট পা ভিজিয়ে রাখলে গোড়ালির আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

  • গ্লিসারিন এবং রোজ-ওয়াটার সমান পরিমাণে মিশিয়ে তা ফেটে যাওয়া পায়ে দিলে গোড়ালির ত্বক কোমল হয়ে আসতে শুরু করবে।

  • পেপে এবং লেবুর রস দিয়ে তৈরি মিশ্রণ সপ্তাহে একদিন পায়ে লাগানো উচিৎ।

  • একটি বালতি বা গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে সেখানে সামুদ্রিক লবণ, লেবুর রস, গ্লিসারিন এবং গোলাপ-পানি মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর ওই পানিতে পা ভিজিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঝামা বা ‘ফুট স্ক্রাবার’ দিয়ে পায়ের আশপাশে ও ফাটা স্থান ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিতে হবে।

  • স্ক্রাবিং শেষে ১ টেবিল-চামচ গ্লিসারিন, ১ টেবিল-চামচ গোলাপ-পানি ও ১ টেবিল-চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে গোড়ালি ফাটা জায়গায় লাগিয়ে রাখতে হবে সারারাত। এই উপকরণ আঠালো তাই চাইলে ঘুমানোর আগে মোজা পরে ঘুমানো যেতে পারে।সবশেষে সকাল বেলা হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেললেই পা দেখাবে মসৃণ ও ফাটলমুক্ত। কিছুদিন পর পর এই পদ্ধতিতে পা পরিষ্কার করলে উপকার পাওয়া যাবে।

  • প্রথমে পা পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর গোড়ালির ফেটে যাওয়া জায়গায় ভেজিটেবল অয়েল লাগিয়ে একজোড়া মোটা মোজা পরে সারারাত রেখে দিতে হবে। সকালবেলা কুসুম গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে নিলেই গোড়ালির ফাটল কমে আসবে।

  • একটি পাকাকলা চটকে নিয়ে পুরো পায়ে এবং গোড়ালিতে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

  • একটি পাকাকলার সঙ্গে অর্ধেক অ্যাভোকাডো ফল বা খানিকটা নারিকেলের শাঁস ব্লেন্ড করে ঘন পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর সেটা গোড়ালির ফেটে যাওয়া জায়গায় লাগিয়ে নিতে হবে।

  • অ্যাভোকাডো ফল ও নারিকেলে আছে প্রয়োজনীয় তেল, ভিটামিন ও চর্বি। তাই এসব উপাদানের তৈরি পেস্ট পায়ে লাগালে গোড়ালি থাকবে মসৃণ ও কোমল। গোড়ালি পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে হালকা গরম পানিতে ১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর ১ টেবিল-চামচ ভ্যাসলিন ও ১ টেবিল-চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে এই মিশ্রণ শুকনা পা ও গোড়ালির ফেটে যাওয়া স্থানে ত্বক শুষে না নেওয়া পর্যন্ত ঘষতে হবে। এই মিশ্রণ রাতে ঘুমানোর আগে লাগিয়ে একজোড়া পশমের মোজা পরে নিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। পশমের মোজা শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখবে এবং এতে মিশ্রণটির কার্যকারীতে বাড়াবে। সকালে উঠে ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে।

  • মধুতে আছে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করার উপাদান। এছাড়াও মধু ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।কুসুম গরম পানিতে ১ কাপ মধু মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ফাটা গোড়ালির চামড়া নরম হয়ে এলে হালকা ভাবে পা ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে পায়ের রুক্ষ ত্বক কোমল ও নমনীয় হবে। আর নিয়মিত ব্যবহারে পা ফাটাও কমে আসবে।

  • ত্বকের মরা চামড়া দূর করতে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য চালের গুঁড়ার জুড়ি নেই। ২ বা ৩ টেবিল-চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু ও আপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। পায়ের গোড়া বেশি শুষ্ক হলে এই মিশ্রণের সঙ্গে অলিভ অয়েল বা কাজুবাদামের তেল মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।হালকা গরম পানিতে ১০ মিনিট পা ভিজিয়ে রেখে মিশ্রণটি দিয়ে পা স্ক্রাব করে নিলেই ত্বকের মৃতকোষ দূর হয়ে যাবে।

  • একটি তুলার বলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অলিভ অয়েল নিয়ে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর একজোড়া মোজা পরে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে পা ধুয়ে ফেলতে হবে।

  • ১টি ছোট বোতলে ১ টেবিল-চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা লেমন অয়েল ও সমপরিমাণ পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণ ফুট ক্রিম হিসেবে রাতে বা দিনে কয়েকবার করে পায়ে ব্যবহার করা যাবে।

 

ফাটা গোড়ালি এবং শুষ্ক পায়ের ত্বকের মতো সমস্যা সহজেই সমাধান করা সম্ভব, কিন্তু ভুল চিকিৎসার কারণে এটি আরো প্রকট হতে পারে। তাই সবসময় বিশেষজ্ঞদের থেকে মতামত এবং সাহায্য নেয়া উচিৎ এরকম সমস্যার সম্মুখীন হলে।


Comments are closed.