প্রাচীন এক খাবার হিং। এটার নাম আসাফোয়েটিডা। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এখনও হয়। হয়তো একেক অঞ্চলে এটি একেক নামে পরিচিত। তবে ‘হিং’ নামে সুপরিচিতি পেয়েছে। অনেকটা মসলার মতো। ফেরুলা গোত্রের উদ্ভিদের মূল থেকে সংগৃহিত হয়। এক ধরনের মসলা। তবে ভারত ও নেপালের মতো বেশ কয়েকটি দেশে হিং চিকিৎসার উপকরণ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। এটা হার্বাল।

ভারতিয় ভেজেটারিয়ান রান্নায় হিং এর প্রয়োগ অবশ্যাম্ভাবী।

উপমহাদেশের অনেক হিং এর গন্ধ স্বাদ ভিন্ন মাত্রা পায় যখন তাকে তেল বা ঘিতে ভুনা হয়।
আমরা অনেকেই আমিষ-নিরামিষ রান্নায় হিং ব্যবহার করে থাকি, তবে প্রধান মশলা হিসেবে নয় বরং সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে,
যেমন- যদি খাসির মাংসে গন্ধ থাকে, তাহলে ভাজার সময় একটু হিং দিলে গন্ধটা চলে যাবে।

যারা নিরামিষ খান তারা অনেকেই পেঁয়াজ পছন্দ করেন না। কিন্তু পেঁয়াজ এমন একটা সবজি, যা রান্নায় আলাদা মাত্রা যোগ করে। তাই নিরামিষ রান্নাতে পেঁয়াজের গন্ধ আনতে আদার রসে হিং ভিজিয়ে ফোড়ন দিলে অনেকটা পেঁয়াজের গন্ধ আসবে।
ডালে হিং এর ব্যবহার , ডালের স্বাদ বারিয়ে তুলবে বহুগুণ।

\কুমড়োর ছক্কা বা চচ্চড়ির মতো সাধারণ তরকারিতেও একটু হিং দিলে স্বাদ অন্যরকম হবে ।

কিভাবে ব্যবহার করবেন ঃ

  • বাজারে হিং আস্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। বাড়িতে এটাকে রান্নার জন্য প্রস্তুত করে নিতে হয়।
  • প্রথমে আস্ত হিং একদম ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন।
  • ফ্রাইং প্যানে এক চামচ ঘি গরম করে নিন।
  • এখন এতে কেটে নেয়া হিং গুলো ছেড়ে দিন।
  • ভালো ভাবে ভেজে নিন। চুলার আচ কমিয়ে ভাজবেন, যাতে পুড়ে না যায়।
  • ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে একটা প্লেটে ছড়িয়ে দিন। ঠান্ডা হলে গ্র্যান্ডার মেশিনে ভালোভাবে গ্র্যান্ড করে নিন।
  • কাচের বোতল বা জারে ভালভাবে মুখ বন্ধ করে সংরক্ষন করুন।

হিং এর উপকারিতা ঃ

মসলা ছাড়াও হিং এর রয়েছে অসাধারন ঔষধি গুনাগুন। স্বাস্থ্যগুণ মেলে এতে।  প্রাচীনকালে পানির সঙ্গে হিং এর পাউডার মিশিয়ে নারীরা খেতেন গর্ভধারণের তথ্য পাওয়ার জন্য। অনেকে খেতেন হজমের সমস্যা দূর করতে। পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে হিং এর পেস্ট বানিয়ে তা বুক ও নাকের নিচে মাখা হয়। এর নির্যাস দেহে প্রবেশ করে, যা কিনা সর্দি-ফ্লু দূর করে। অ্যাজমার জন্যেও উপকারী পদ্ধতি এটি।

আয়ুর্বেদে হিং একটি গুরুত্বপূর্ণ হার্বাল। হজমের যাবতীয় সমস্যা তাড়াতে হিংকে শক্তিশালী সমাধান বলে মনে করা হয়। হিং পানিতে সেদ্ধ করে পেস্ট বানালেই অনেক সমস্যা সমাধান মিলবে। এই পেস্ট পেটের ওপর লাগিয়ে রাখাতে হবে। হালকা গরম পানির সঙ্গে হিং এর পাউডার মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে অনেক উপকার মেলে। যেমন-

  •  হিং এর পানিতে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে। ফলে হজমের সমস্যা ছাড়াও এসিডিটির ঝামেলা দূর করে সঙ্গে সঙ্গে।
  •  রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে সহজে ডায়াবেটিস হয় না।
  •  আসাফোয়েটিডা পানিতে গরম করা হলে পরিশোধক উপাদান তৈরি হয়। তখন এটি ব্লাডার আর কিডনি পরিষ্কার করে। মূত্রথলীর সংক্রমণ রোধেও দারুণ কার্যকর এটি।
  •  প্রতিদিন এই পানি খেলে হাড় শক্ত হয়।
  •  এতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। ফলে অ্যাজমার জন্য দারুণ উপকারী।
  •  হিং-এ রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। এটা চোখের যত্ন নেয়। চোখ শুষ্ক হতে দেয় না এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
  •  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এতে। দেহে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় না হিং খেলে। দাঁত মজবুত করে। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এর অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক উপাদান।

হিং আপনার রান্নাকে করে তুলবে অতুলনীয় এবং অনন্য। রান্নায় এক চিমটি হিং আপনার রান্নাকে করে তুলবে ভালোবাসায় টইটুম্বুর। তাই আজ থেকে চলুক এক চিমটি ভালোবাসা হিং এর সাথে।


Comments are closed.