পেঁয়াজের বিকল্প ‘নেগি’ 

উন্নত বিশ্বে পেঁয়াজের ওপর চাপ কমানোর জন্য পেঁয়াজের বিকল্প নেগি বা বাঞ্চ অনিয়নের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। পত্রবহুল নেগি স্বাদ ও গন্ধে হুবহু পেঁয়াজের মতো, পেঁয়াজের পরিবর্তে নেগি দিয়ে রান্না করলে স্বাদের কোনো কমতি হয় না, বরং পেঁয়াজ পাতার গন্ধে আলাদা রুচিকর পরিবেশ তৈরি করে।

 

মাঝে মাঝেই দেখাযায় দেশের বাজারে পেয়াজের বাজার দর হুহু করে বাড়ছে।  এর একমাত্র কারন কেউ কখনো বিকল্প ব্যবস্থা খুজে না। আমাদের উপায়ও চেই কারন দেশের কৃষি ক্ষেত্রে কেউ নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে না অথবা চেষ্টা করলেও উচ্চ মহলের উদাসীনতায় আমরা আগাতে পারছি না।

নেগি চাষ খুব সহজ এবং বাংলাদেশের মাটিতে তেমন কোন পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে উঠতে পারে।

পেঁয়াজের বিকল্প নেগিনেগি বা বাঞ্চ অনিয়ন সুনিষ্কাশিত যে কোনো মাটিতে ভালো জন্মে। তবে জৈব পদার্থ সমদ্ধ মাটিতে ভালো ফলন দেয়। পেঁয়াজের মতো বীজতলায় চাড়া উৎপাদন করে তা জমিতে রোপণ করে নেগি চাষ হয়। তবে জমিতে সরাসরি লাইনে বীজ রোপণ করেও চাষ করা যেতে পারে। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১৫-১০ সে.মি. এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫ সে.মি. হতে পারে।

হেক্টর প্রতি ২৫০ কেজি সার (ইউরিয়া : টিএসপি : এমপি : ১:২:২) সার জমি তৈরির সময় ভালোভাবে জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। উক্ত নেগির বয়স ২ থেকে ৩ সপ্তাহ হলে উপরি ২০-২৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ফসল উত্তোলনের ২ সপ্তাহ আগে গোড়ায় মাটি তুলে দিলে নেগির কা- লম্বা ও শক্ত হয়। রবি ঋতু ৭-১০ দিন পানি অন্তর অন্তর পানি সেচ দিতে হলেও খরিপে সেচ প্রয়োজন হয় না বলেই চলে। তবে বর্ষায় জমি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে।

খরিপ ঋতুতে উৎপাদিত নেগিতে ডাউনি মিল ডিউর আক্রমণ দেখা যায়। তাই চারা অবস্থায় অর্থাৎ ফসল সংগ্রহের ২-৩ সপ্তাহ পূর্বে একবার রিডোমিল গোল্ড বা ডাইথেন এম-৪৫ সপ্রে করে দিলে এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায় না।

বারী পেঁয়াজ ২ ও ৩ খরিপ মৌসুমে চাষ উপযোগী হলেও অন্যান্য অধিকাংশ জাত শীতকালেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু নেগি আমাদের দেশে বছরের সব সময়ই উৎপাদন করা সম্ভব। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব খামারে নেগির গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে চাষ উপযোগী তিনটি লাইনের সাউ নেগি ১, সাউ নেগি ২ ও সাউ নেগি ৩ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তা ছাড়া বিএডিসি, কাশীম পুরে নেগির সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চলছে। অন্যান্য দেশের মতো আমাদেও দেশেও নেগি চাষে সরকার এগিয়ে আসলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্র্রয় হবে।

আপডেটঃ

বারি পাতা পেঁয়াজ-১ উৎপাদন কলাকৌশল

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা উপ-কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাহিরদিয়া, ফরিদপুর

 

 


Comments are closed.