চালতা চেনে না এমন কেউ নেই। চালতা গাছ মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। এ গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। চালতা গাছ ভারত, শ্রীলংকা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশেও প্রচুর জন্মে। চালতা গাছের মূল আকর্ষণ হলো এর ফুল। মে-জুন মাসে চালতা গাছে ফুল ফোটে।

চালতা একটি অপ্রকৃত ফল। ফলগুলো হয় বড় ও গোলাকার। ফলের রং হলুদাভ সবুজ হয় এবং ফলগুলো টক টক স্বাদযুক্ত হয়। চালতা ফল দিয়ে অত্যন্ত সুস্বাদু আচার তৈরি করা যায়। কিছু কিছু এলাকায় চালতা দিয়ে তরকারি রান্না করে খায়। চালতা দিয়ে চাটনিও তৈরি করা যায়। পাকা চালতা ভর্তা মসলা দিয়ে মাখিয়েও খাওয়া যায়।

চালতায় রয়েছে নানা খাদ্যগুণ। যেমন-

*চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন , বিসি-এর ভালো উত্‍স।

*প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এই ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে।

*চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা জরায়ু ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

*চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

*চালতায় উপস্থিত আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের সংবহন ঠিক রাখে। চালতার বিভিন্ন উপাদান হার্টের নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

*চালতা পেটের নানা অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডায়রিয়া সারাতে কাঁচা চালতার রসের তুলনা নেই।

*রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে চালতা।

*ঠাণ্ডা ও কাশির জন্য পাকা চালতার রস চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

*কিডনীর নানা রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে চালতা।

* অন্ত্রে বাসা বাঁধা কৃমির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চালতা অসাধারণ ক্ষমতা রাখে।

* পাকস্থলিতে যাদের আলসার আছে, তাদের জন্য উপযুক্ত ওষুধ হতে পারে চালতা।

*শুধু ফল নয়, চালতার মূল ও পাতারও রয়েছে ঔষধিগুণ। মচকে গিয়ে ব্যথা পেলে সেখানে চালতা গাছের মূল ও পাতা পিষে প্রলেপ দিলে ব্যথা কমে যায়।

শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও রয়েছে চালতার ব্যবহার। যেমন –

*কাঁচা চালতার জলে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় নিয়মিত লাগালে চুল পড়া কমে যায়।

*কাঁচা চালতার রসের সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে সপ্তাহে দুবার চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি দূর হয়ে যাবে।

*চালতার রসের সাথে চালের গুঁড়া মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করলে মরাকোষ পরিষ্কারের পাশাপাশি ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল ও কোমল।

*চালতার রস টোনার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। চালতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে তাতে তুলো ভিজিয়ে ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে বলিরেখা পড়া বিলম্বিত করে এই টোনার।

*চালতার রসের সাথে চিনির গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকের কালো অংশগুলোতে লাগান। আঙুল দিয়ে হালকা মাসাজ করুন দশ-পনেরো মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে।


No comments so far.

Leave a Reply