কুল বা বরই খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ কমই আছে। কাঁচা বা পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া হয় ফলটি। বরইতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও ফ্যাটি অ্যাসিড। শরীরের জন্যও এই ফলটি বেশ উপকারী। শীত থেকে গরমের শুরু অবধি সময়টা দেশি ফলের অভাব মেটায় প্রধানত দেশি টক বরই এর ভেষজ গুণসহ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে অনেক।

আসুন বরই এর ভেষজ গুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই:

পুষ্টি:বরই এর ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। তবে এতে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম কুলে রয়েছে ক্যালরি ৭৯ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২০ গ্রাম, আঁশ ১০ গ্রাম। দৈনিক চাহিদার ৭৭ ভাগ ভিটামিন সি, ৫ ভাগ পটাশিয়াম ভাগ পাওয়া যায়। এছাড়া এতে অল্প পরিমাণে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, খনিজ উপাদান রয়েছে। তবে প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।

ভেষজগুণ: বরই রক্ত শোধন, রক্ত পরিস্কার এবং হজমিকারক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া পেটে বায়ু, অরুচি ও প্রদর রোগ ফুল থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

কুলের উপকারিতা:

১.বরই খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এই ফলের রয়েছে ক্যানসার কোষ, টিউমার কোষ ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা। এটি যকৃতে সুরক্ষা বর্ম তৈরি করে।

২.বরই হজমে সহায়ক। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য হজমজনিত সমস্যার সমাধানে সহায়ক।

৩. বরই  প্রচুর ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা ভালো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ফ্রি র‌্যাডিকেল কমাতে চমৎকার কাজ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ডায়াবেটিস এবং ক্যানসারের মতো রোগপ্রতিরোধ করে। অবসাদ কমাতে সাহায্য করে।

৪. মৌসুমি জ্বর, সর্দি-কাশিও প্রতিরোধ করে বরই। এ ছাড়া হজমশক্তি বৃদ্ধি ও খাবারে রুচি আনে। ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে কোমল করে তুলতে সহায়ক।

৫. বরই রক্ত বিশুদ্ধকারক হিসেবে কাজ করে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টক বরই উপকারী।

৬. বরই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলে এটি সংক্রামক রোগ যেমন- টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, জিহ্বায় ঘা ইত্যাদি দূর করে।

৭. বরইকে রাগের প্রতিষেধক বলা যায়। যারা সামান্য বিষয়েই অতিরিক্ত রেগে যান, তারা বরই খেতে পারেন। ‘জার্নাল অব এথনোফার্মাকোলোজি ২০০০’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাগ প্রশমনে সাহায্য করে এ ফল। গবেষকরা ইঁদুরের ওপর বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখেন যে, বরই আসলেই রাগ কমাতে সহায়ক।

৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী একটি ফল বরই। ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘ফার্মাসিউটিক্যালস বায়োলজির’ এক প্রতিবেদন এ তথ্য নিশ্চিত করে। বরইয়ের পুষ্টি উপাদানসমূহ রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

৯.ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা রয়েছে বরইয়ের। ২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘ফার্মাকগনোসি রিভিউ’ এর তথ্য অনুযায়ী এতে থাকা অ্যান্টি ক্যানসার উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এটি লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধেও লড়াই করে।

১০. বরইতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ থাকে। এটি গলার বিভিন্ন ইনফেকশনজনিত রোগ (যেমন : টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, জিহ্বাতে ঠান্ডাজনিত লালচে ব্রণের মতো ফুলে যাওয়া, ঠোঁটের চামড়া উঠে যাওয়া) দূর করে খুব সহজে। এছাড়াও রক্তশূন্যতা সারায় এই ফল। এটি ডায়রিয়া, জ্বর, অ্যাজমা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।


No comments so far.

Leave a Reply