মরিচ চিবিয়ে কান মুখ গরম করেন নি এমন মানুষ খুব কমই দেখা যাবে। কম বেশি আমাদের সকলেরই এই ধরনের মজার অভিজ্ঞতা আছে। ঘটনাটি বেশি ঘটে আমরা তখন যখন আমরা মুড়ি মাখানো বা ঝালমুড়ি খাই। মরিচ চিবালে কেমন লাগে সেটি জানা সত্ত্বেও আমরা মুড়ি মাখানোর সময় বলি যে “মামা আমারটাই কিন্তু ঝাল বেশি হবে”। তো সে যাই হোক আমরা এবার কাজের কথাই ফিরি। আজকে আমি জানাবো পৃথিবীর ভয়ংকরতম মরিচের খবর যেটি খাবার পরে আপনি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন…বোম্বাই মরিচের কথা কমবেশি সকলেই জানেন। সবাই মনে করেন এটিই মনেহয় সব থেকে ঝাল মরিচ যার আরেকটি নাম হচ্ছে “নাগা মরিচ”।
উৎপাদনঃ
এশিয়া মহাদেশে ভারত , শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই বোম্বাই মরিচের চাষ করা হয় । বাংলাদেশের সিলেট এবং বরিশালে এই মরিচ বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে ।
চাষ প্রক্রিয়াঃ
বোম্বাই মরিচ শীত ও গ্রীষ্ম এই দুই ঋতুতেই বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা যায় । প্রাথমিক অবস্থায় হালকা বৃষ্টি এবং ফসল পরিপক্ক হবার সময় কিছু বৃষ্টি হলে তা মরিচের ভালো ফলনের পক্ষে মানানসই হয় । অতিবৃষ্টি বা খরা দুটোই এই মরিচের জন্য ক্ষতিকর । বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা ছাড়াও , সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে এই মরিচ বাড়িতে টবেও চাষ করা যায় । চারা লাগানোর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই ফুল ধরে এবং এর ১ মাসের মধ্যেই মরিচ খাবারের উপোযোগী হয় । কাঁচা মরিচ যেমন বেশি ছোট অবস্থায় ঝাল থাকে না ,বোম্বাই মরিচের কিন্তু ছোট অবস্থায় ও ঝাল অনেক বেশি থাকে এবং সুগন্ধিতে ভরিয়ে রাখে ফল দেয়ার শুরুর থেকেই ।
বোম্বাই মরিচের বিস্ময়কর কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা:
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
বোম্বাই মরিচে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরে ‘দ্বাররক্ষী’ হিসেবে কাজ করে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। একইসাথে বোম্বাই মরিচ বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। খেয়াল করে দেখবেন, বোম্বাই মরিচ খাওয়ার ফলে অনেক সময়ে বন্ধ নাক খুলে যায়। বোম্বাই মরিচে থাকা এই ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুব দারুনভাবে কাজ করে।
ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী
বোম্বাই মরিচে ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই। যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উৎপন্ন করতে সাহায্য করে থাকে বলে ত্বক অনেক সুস্থ থাকে।
জিরো ক্যালোরি
খুবই মজার ব্যাপার হচ্ছে, বোম্বাই মরিচে কোন ক্যালোরি নেই। অর্থাৎ একদম শূন্য ক্যালোরিযুক্ত একটি খাদ্য উপাদান হলো বোম্বাই মরিচ। আরো দারুণ তথ্য হলো, বোম্বাই মরিচ খাওয়ার পরে শরীরের মেটাবলিজম প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়! তাই আপনি যদি ডায়েটে থাকেন, তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশী করে বোম্বাই মরিচ যোগ করার চেষ্টা করুন।
রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
যাদের ডায়বেটিসের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য বোম্বাই মরিচ অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। বোম্বাই মরিচ রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। তবে এমনটা মনে করবেন না যে, অতিরিক্ত মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরে বোম্বাই মরিচ খেলে সাথে সাথে কাজ করবে!
খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে
বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে, সেক্ষেত্রে বোম্বাই মরিচ খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়াও, সাধারণ সময়ে খাদ্য দ্রুত পরিপাক করতে সাহায্য করে বলে নিয়মিত কাঁচামরিচ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বোম্বাই মরিচ খাওয়া মানে মনমেজাজ ভালো
ঝাল কোন খাবার বিশেষ করে বোম্বাই মরিচ খাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক থেকে ‘এন্ডরফিনস’ নিঃসৃত হয়, যা মনমেজাজ ভালো ও চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে থাকে। যার ফলে বোম্বাই মরিচ খাওয়ার পরে আপনি খুব ফুরফুরে ও আনন্দিত বোধ করবেন। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
ত্বকের ইনফেকশনের সমস্যায় কাজ করে থাকে
বোম্বাই মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার ফলে, শরীরের যেকোন অংশে ত্বকের ইনফেকশন হওয়া থেকে এটি প্রতিরোধ করে থাকে।
আয়রনপূর্ণ বোম্বাই মরিচ
যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশী করে বোম্বাই মরিচ যোগ করা জরুরি। কারণ প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান হিসেবে বোম্বাই মরিচে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন।
চোখের জন্য দারুণ উপকারী
ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা-ক্যারোটিন। যা সুস্থ চোখের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শুধুমাত্র স্বাদ বৃদ্ধির জন্যেই নয়, নিজেকে সুস্থ রাখার জন্যেও এখন থেকে বোম্বাই মরিচের আচার যোগ করুন।