শিশির ভেজা ঘাস

কুয়াশা ঘেরা ভোর
শীতে মোড়ানো চাদর,
হিম হিম ঠাণ্ডা হাওয়া
বাতায়নে মিষ্টি রোদের ছোঁয়া।

শিশির ভেজা ঘাস ফুল
প্রকৃতি শীত প্রেমে ব্যকুল ,
খেজুর গাছের রসের হাড়ি
গন্ধে মৌ মৌ সারা বাড়ি।

সিনেমায় আমরা যখন বৃষ্টিতে ভেজা গান দেখি তখন যেমন আলাদা আমেজ আসে, সকালে শিশিরে ভেজা ঘাসের ওপর হাঁটলে আমাদের জীবনে তার চেয়ে অনেক বেশী আনন্দ উপভোগ করা যায়। বালক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সব বয়সের সবার শিশির ভেজা ঘাস দেখলেই মন আঁচান করবে একটু খালি পায়ে স্পর্শ করতে। সেই অনুভূতি লিখে প্রকাশ করা কঠিন কাজ। চনুন জেনে নেই এই আবেগ অনুভূতির বাইরে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটার কিছু উপকারী দিক।

সকালে শিশির ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার সুফলঃ

শিশির ভেজা ঘাস, স্বামী স্ত্রী হাঁটছে

খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে ভোরবেলা একটু টাইম নিয়ে হেঁটে বেড়ালে অধিক ধরনের সুফল পাওয়া যায় বলা হয়ে থাকে জানিয়েছেন গবেষকেরা। সবার আগে চলে আসে ভোরের নির্মল দূষণমুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার ব্যাপারটি। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা তো বাড়েই, সেই সাথে শরীরে রক্ত চলাচলও ভালো হয়। খালি পায়ে ভেজা ঘাসে হাঁটাহাঁটি করলে সারা গাত্রে রক্তের পরিসঞ্চালন বাড়ে। চিকিৎসা শাস্ত্র মতে, এ পরিসঞ্চালনের মাধ্যমেই শিশির হাঁটা বা ডিউ ওয়াকিং এর সুফলের সূচনা।

পায়ের পত্রের কাছের রক্তনালিগুলো ঠান্ডা শিশিরের সংস্পর্শে উদ্দীপিত এবং সংকোচন হয়। এতে তাপমাত্রা যাওয়ার আশঙ্কায় দেহের রক্তনালিগুলোতে সার্বিক ভাবে রক্তপ্রবাহে জাগে এক চনমনে ভাব, নিউ প্রাণ পায় একঘেয়ে ভাবে ধুকপুক করে চলা হৃদ্‌যন্ত্র। এভাবেই এই ডিউ ওয়াকিং আমাদের হৃদ্‌রোগ, রক্ত তীব্র হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত প্রবণতা, রক্তনালিতে চর্বি জমা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে অতীব কার্যকর অবদান রাখার জন্য পারে।

পায়ের পাতায় সরাসরি ভাবে ভেজা ঘাসের স্পর্শে স্নায়ুতন্ত্র খুবই উপকৃত হয়।

তাপমাত্রার তারতম্যের সঙ্গে সাথে হাইড্রোথেরাপির দ্বারা আমাদের স্নায়ুগুলো তরতাজা হয়ে ওঠে যখন আমরা ভেজা ঘাসের তুষার বরফ শিশিরে পা ফেলে চলি। এ ব্যতীত আমাদের সেন্সরি স্নায়ুতন্ত্র জেগে ওঠে খালি পায়ে হাঁটলে। রিজন এতে প্রোপ্রিয়োসেপ্টিন জাগ্রত হয় বা যে স্থানে আমরা অবস্থান করছি তা সম্মন্ধে অঙ্গে ঠিক অনুভূতি ও সচেতনতা প্রস্তুত হয়। আমাদের এ নাগরিক জীবনে বড় এক জনগোষ্ঠীর পায়ের পেশি, হাড় ও রক্তনালির বিভিন্ন গুরুতর প্রবলেম নোটিশ দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে এই ডিউ ওয়াকিং বা খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটা খুবই কল্যাণময় প্রুফড হতে পারে।

পায়ের পত্রে সরাসরি ভাবে ভেজা ঘাসের স্পর্শে স্নায়ুতন্ত্র খুবই উপকৃত হয়

পায়ের রক্তনালির ক্ষীণ পরিসঞ্চালনের জন্য সম্পন্ন বয়সে অধিকাংশই ভেরিকোস ভেইন্স বা ফ্ল্যাট ফুট রোগে ভুগে থাকেন। এর ফলে খুঁড়িয়ে হাঁটেন অনেকেই, পঙ্গু হয়ে যান কেউ কেউ। তবুও প্রভাতে বাইরে গিয়ে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটার অভ্যাস থাকলে এ ভয়ংকর রোগগুলো থেকে অনেক সহজেই অব্যাহতি পাওয়া যেতে পারে। ডায়বেটিস জনিত স্নায়ুতন্ত্রের জড়তাতেও এর কার্যকারিতা পাওয়া যায়।

আবার, অতীব কষ্টদায়ক মাথা বেদনা মাইগ্রেনের জন্য ডিউ ওয়াকিং নামের এই হাইড্রোথেরাপি খুবই সুফল বয়ে আনতে পারে। এই ছাড়া এখনো, অতিশয় দৃঢ় প্রুফ না পেলেও, বেশির ভাগ গবেষকেরই অভিব্যাক্তি হচ্ছে, সবুজ গাছগাছালি, মাঠ, ঘাসের দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে দৃষ্টি শক্তি বাড়ে। সর্বাপেক্ষা ইম্পোর্টেন্ট জিনিস হচ্ছে, আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ডিউ ওয়াকিং এর জুড়ি মেলা ভার। একই সঙ্গে মেডিটেশনের মতো প্রশান্তি, মুক্ত বায়ুতে ব্যায়াম, পায়ের আরামদায়ক ম্যাসেজ আর কিসেই বা পাওয়া যায় বলুন!

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ডিউ ওয়াকিং

আমাদের মতো দেশে সর্বাপেক্ষা অবহেলিত হচ্ছে মানসিক শরীরের ব্যাপারগুলো। কিন্তু দিনের পর দিন ভয়াবহ ভাবে বেড়ে চলা উদ্বিগ্নতা (অ্যাংজাইটি), বিষাদ বা মানসিক অবসাদ (ডিপ্রেশন) আমাদের গ্রাস করে চলেছে। নগরজীবনে এর ইফেক্ট ভয়ংকর রকমের বেশি। মানসিক কষ্ট ও অসুখগুলো আমাদের শরীরকেও অসুস্থ করে তোলে। মানসিক প্রবলেম কখনও আমাদের নিয়ে যায় আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপের দিকে যা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু সকালের সূর্যালোক ভালোভাবে শরীরে পাঠ করলে খুবই কার্যকর ভাবে নিঃসৃত হয় আমাদের শরীরের সেরাটোনিন হরমোন, যাকে মানসিক শরীরের ভাষায় ‘ফিল গুড হরমোন’ হয়।

পায়ের পত্রে সরাসরি ভাবে ভেজা ঘাসের স্পর্শে স্নায়ুতন্ত্র খুবই উপকৃত হয়

ভোরের ডিউ ওয়াকিং সম্ভবত আমাদের অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধের ওপরে নির্ভরতা প্রচুর খানি কমিয়ে দেওয়ার জন্য পারে
ভোরের ডিউ ওয়াকিং হয়তো-বা আমাদের অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধের ওপরে নির্ভরতা প্রচুর খানি কমিয়ে দিতে পারেছবি: পেকজেলস ডট কম
ভোরের ডিউ ওয়াকিং সম্ভবত আমাদের অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধের ওপরে নির্ভরতা অনেক খানি কমিয়ে দেওয়ার জন্য পারে। অন্তত মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে যেন আমরা প্রাতর্ভ্রমণে বের হয়ে ঘাসে পা রেখে কিছুক্ষণ খালি পায়ে হাঁটি প্রতিদিন। সবুজের সমারোহ, শিশিরের ভেজা সুশীতল অনুভূতি, কোমল ঘাসের স্পর্শ এই সবকিছু আমাদের ক্লান্তি, হতাশা, অবসাদ, বিষাদ আর উদ্বেগকে ঠেলে দেওয়ার জন্য পারে বহুদূর। ডিউ ওয়াকিং নিয়ে যারা তত্ত্বানুসন্ধান করছেন, তাদেরও এ সেইম অভিমত।

কোথায় কীভাবে হাঁটবেন

কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। ছেলেবেলায় ফেলে আসা অথবা প্রচুর কালেভদ্রে বেড়াতে যাওয়া নানাবাড়ি দাদাবাড়ির সেই গ্রামের অবারিত প্রান্তর মাঠ ঘাট, খেত না থাকলেও তো আমাদের আছে কিছু পার্ক, মাঠ, উদ্যান। ভোরবেলা হাঁটতে বেরিয়ে সেখানে ঘাসের টাচ নেওয়া যেতেই পারে খালি পায়ে।

সুযোগ থাকে তাহলে এক চিলতে উঠোনে বা অ্যাপার্টমেন্ট এর সামনের ঈষৎ দুই ফুট জায়গাতেও সম্মিলিত চেষ্টায় ঘাস লাগিয়ে নেওয়া যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের মতো এলাকার প্রশাসনের সহায়তায় ফুটপাত বরাবর এক চিলতে জায়গায় ঘাসের দীর্ঘ বেড বা রোড ভার্জ স্থাপন করা যায়। আর শিশির সারা বছর কোথায় পাওয়া যাবে এ অজুহাতে যারা মাথা নাড়তে চাইছেন, তাদের জন্য সংবাদ হলো, গবেষকেরা বলছেন, বৃষ্টি ভেজা ঘাসেও সমান সুফল পাওয়া যায়। একারণে জড়তা ঝেড়ে ফেলে টাইম এসেছে ডিউ ওয়াকিং এর ব্যাপারে যথাযথ প্রচার ও এর সুফলগুলো সকল মানুষের গোচরে আনার।

 


No comments so far.

Leave a Reply