ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে ও সুন্দর উজ্জ্বল ত্বক পেতে আমরা নামিদামি নানা কোম্পানির নানা ক্রিম ব্যবহার করে থাকি ।অথচ আমাদের বাড়িতেই সহজ প্রাপ্ত বেশ কিছু জিনিস ত্বকে ব্যবহার করেও কিন্তু আমরা দামি প্রোডাক্ট এর সম্মান উপকার পেতে পারি। আর এ রকমই একটি উপাদান হলো ঘি ।রূপচর্চার ঘরোয়া উপাদান বললে ফলের রস,মুলতানি মাটি সহ একাধিক জিনিসের কথা মাথায় এলেও ঘি ব্যবহারের কথা কম লোকই ভাবেন ।অথচ রূপচর্চায় ঘি ব্যবহার করলে পাওয়া যায় অনেক উপকার। বিশেষত ত্বক যদি হয় শুষ্ক ।আসুন দেখে নিই রূপচর্চার জন্য কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে ঘি।
শরীরের ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে
ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে ঘিয়ের মত ভাল কাজ খুব কম জিনিসই করে । ঘিতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের ত্বকের কোষে আদ্রতা পৌঁছায় ।ফলে ত্বক হয়ে ওঠে নরম ও কোমল ।ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে প্রতিদিন স্নান করার আধ ঘণ্টা আগে পরিমাণমতো ঘি সামান্য গরম করে নিয়ে তিন থেকে পাঁচ মিনিট গোটা শরীরে ভালো করে ম্যাসাজ করতে হবে ।এরপর ভাল করে স্নান করে মিলেই দেখবেন ম্যাজিক ।গোটা শরীর নিমেষেই নরম ও আদ্র হয়ে যাবে ।
মুখের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে
আপনার মুখের ত্বক যদি শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ হয় তবে মুখে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ঘি ব্যবহার করা যেতে পারে ।বেশি নয় সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মুখে ঘি দিয়ে ম্যাসাজ করলে ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ ও নরম ।শুধু ঘি ব্যবহার না করতে চাইলে সামান্য জলের সাথে ঘি মিশিয়ে তা ভালো করে মুখে লাগিয়ে আলগা হাতে মেসেজ করতে থাকুন ।15 মিনিট রেখে ভাল করে ফেসওয়াস দিয়ে ধুয়ে ফেলুন মুখে নিয়মিত ব্যবহার করলে দেখবেন কোমল ।
ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরাতে
ত্বক শুষ্ক তার ফলে উজ্জ্বলতা যায় হারিয়ে।ক্রমে তা হয়ে ওঠে কালো ও দাগ যুক্ত ।দাগহীন উজ্জ্বল ত্বক পেতে ব্যবহার করতে পারেন ঘি দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ।কাঁচা দুধ বেসন ও ঘি একসাথে একটি পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে নিন প্রথমেই ।এরপর পরিষ্কার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে ফেলুন ফেস প্যাকটি ।পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পরে ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ফেসপ্যাকটি।দেখবেন ত্বকের কালো দাগ হালকা হয়ে এসেছে অনেকটা ।
ত্বকের বলিরেখা দূর করতে
শুষ্ক ত্বকে বলিরেখা দেখা যায় খুব সহজেই।আর এই বলিরেখার মূল কারণ হলো ত্বকের কোষে পুষ্টির অভাব ।এই অকালবার্ধক্য থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রতিদিন 5 থেকে 10 মিনিট অল্প পরিমাণ ঘি নিয়ে গোটা মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন ।কয়েক দিন ব্যবহার করলে দেখবেন ত্বকের বলিরেখা অনেকটাই গায়েব হয়ে গেছে ।
ডার্ক সার্কেল নিরাময়ে
আজকালকার দিনে আমাদের প্রায় সকলেরই ডার্ক সার্কেল দেখা যায় চোখের চারপাশে ।ঘুমের অভাব,স্ট্রেস এগুলি ডার্ক সার্কেল এর মূল কারণ ।এই ডার্ক সার্কেল দেখতে যেমন বাজে লাগে তেমনি ঠিকমতো এর যত্ন না নিলে শুষ্কতা ও বলিরেখা সহজে দেখা দিতে পারে চোখের চারপাশে ।এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রত্যেক দিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে চোখের চারপাশে অল্প পরিমাণে ঘি লাগিয়ে আলতো হাতে মাসাজ করুন ।এরপর সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে জল দিয়ে ঘষে তা ধুয়ে ফেলুন কিছুদিনের মধ্যেই উপকার চোখে পড়বে ।
ঠোটের কালো দাগ দূর করতে
দূষণ,লিপস্টিক ব্যবহার, সিগারেট খাওয়া সহ নানা কারণে ঠোঁটে কালো দাগ ছোপ দেখা দিতে পারে ।এছাড়াও ঠোঁট ফাটা তো বারো মাসের সমস্যা ।অনেক লিপবাম লাগিয়েও কোন লাভ না পেলে ব্যবহার করতে পারেন ঘি।প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার হাতে আঙুলে অল্প ঘি নিয়ে পুরো ঠোঁটে ভালো করে ম্যাসাজ করুন ।সারারাত রেখে দিয়ে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন ঠোঁট ।দেখবেন ঠোঁটের ফাটা ভাব তো দূর হয়েছে সেইসাথে ঠোঁটের কালচে দাগ ও গেছে মিলিয়ে ।
পা ফাটার সমস্যায়
আমাদের মধ্যে অনেকেই পা ফাটার সমস্যায় ভোগে । ঘি কিন্তু এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয় ।নিয়মিত ঘুমোনোর আগে রাতের বেলা ভালো করে পা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফাটা অংশে ঘি মাসাজ করুন 5 থেকে 10 মিনিট ।পরদিন সকালে ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন নিয়মিত ব্যবহার করলে দেখলেন পায়ের ফাটা ভাব দূর হয়েছে ।
তবে পায়ে গি লাগালে মোজা পরতে যেন ভুলবেন না কারণ পায়ের ফাটা অংশে ধুলো ময়লা ঢুকে গেলে তা থেকে হতে পারে নানা ইনফেকশন ।
ঘি এর উপকারিতা নিয়ে এত তো কথা হলো তবে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখা জরুরী ।ঘি শুষ্ক ত্বকের যত্নে খুব ভালো হলেও অয়েলি স্কিন থাকলে ঘি ভুলেও ব্যবহার করবেন না কারণ ঘি ব্যবহার করলেকে অয়েলি স্কিনে একনে বা ব্রণ দেখা দিতে পারে ।