কেমন হয় বলুন তো, যদি এই শীতের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাকে একটু কমিয়ে দেয়া যায়? ভাবছেন, কী করে? কিছু খাবারকে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করে! হ্যাঁ, এমন কিছু খাবার আছে যা ঠাণ্ডা দূর করে শরীরে এনে দেবে উষ্ণতা। আসুন জেনে নেই সেই খাবারগুলো সম্পর্কে।

 

গরম পানীয়ঃ

তাৎক্ষনিক ভাবে শীত কমানোর জন্য গরম কোন পানীয় খাওয়ার অন্য কোন বিকল্প নেই। শীতটা একটু বেশী লাগলেই এক কাপ চা অথবা কফির মগটি টেনে নিতে পারেন। কিন্তু দিনে ২/৩ কাপের বেশী খাবেন না চা অথবা কফি।

চা বা কফির বদলে পান করতে পারেন হট চকোলেট কিংবা হট চকোলেট মিল্ক। উপকার পাবেন সাথে সাথেই। তবে ঠাণ্ডা দূর করার জন্য সবচাইতে উপকারী আদা চা কিংবা মসলা চা। কফি বা গ্রিন টি এর চাইতে এই মসলা চা দ্রুত আপনাকে এনে দেবে উষ্ণতা।

 

 

স্যুপ ও স্টু জাতীয় খাবারঃ

শীত দূর করার জন্য খেতে পারেন স্যুপ বা স্টু। শীতের সন্ধ্যায় গরম গরম স্যুপের বাটি নিয়ে মজা নিন স্যুপের। এতে শরীর গরম হবে। ঠাণ্ডা দূর হবে নিমেষেই। স্যুপে একটু ঝাল যোগ করতেও ভুলবেন না যেন। এছাড়া স্যুপ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশী ভালো। যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা রাতের ভারী খাবারের পরিবর্তে স্টু রাখতে পারেন। ঠাণ্ডা দূর হবে ও শরীরও ভালো থাকবে।

 

কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারঃ

যে সব খাবারে কার্বোহাইড্রেট বেশী পরিমাণে বিদ্যমান সেসব খাবার ঠাণ্ডা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। কার্বোহাইড্রেট শরীরের থাইরয়েড ও অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি গুলোতে পৌঁছে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রক্ত সঞ্চালন করে। এতে করে ঠাণ্ডা অনেকাংশে কমে যায়। আটার রুটি, ভাত, চিনি, ডাল এই সবই কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। যদি স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার চান তবে ওট, বাদামী চাল কিংবা বার্লি খেতে পারেন।

 

তেলঃ

তেল বা চর্বি বরাবরই ঠাণ্ডা দূর করতে বেশ কাজে লাগে। শীতের খাবারে ঘি, সরিষার তেল ও অলিভ অয়েল ব্যবহার করে দেখুন। শরীরকে গরম রেখে ঠাণ্ডা দূর করবে এবং খাবারের স্বাদে নতুনত্ব আসবে। সকালের নাস্তায় ঘিয়ে ভাজা পরোটা, ভাতের সাথে সরিষার তেলের আলুভর্তা, সালাদে অলিভ অয়েলের জাদু- দেখবেন শীত কোথায় পালিয়ে গেছে! খাওয়ার পাশাপাশি তেল গায়ে মেখেও ঠাণ্ডা দূর করতে পারেন। ঠাণ্ডা লাগলে সরিষার তেল নিয়ে পায়ে মেখে ফেলুন। কিংবা নারকেল তেলও মাখতে পারেন। মাথায় নারকেল তেল মাখলেও ঠাণ্ডা পালাবে।

 

মশলাযুক্ত খাবারঃ

যদিও বেশী মশলাযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। কিন্তু আপনি শীতে একটু মসলা খাবারে যোগ করতে পারেন। পরিমিত পরিমান মশলাযুক্ত খাবার আপনার শরীরকে গরম করবে। ঠাণ্ডা দূরে রাখবে। সুতরাং এই শীতে খাবারে জিরা, ধনে, হলুদ, লবঙ্গ, পাপরিকা, গোলমরিচ, জায়ফল ও দারুচিনি যোগ করতে পারেন ঠাণ্ডা কমানোর জন্য। মশলা যুক্ত আচারও ঠাণ্ডা কমাতে সহায়ক।

 

আদাঃ

আদা হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করার পাশাপাশি প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে শরীরকে গরম করে। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এতে শীতের ঠাণ্ডা দূর হয়। খাবারে সামান্য আদা যোগ করুন। চায়ে, স্যুপে কিংবা খাবারে আদা দিন। এছাড়াও এক গ্লাস গরম পানিতে আদা ফুটিয়ে পান করতে পারেন। ঠাণ্ডা টেরও পাবেন না।

 

 মূল জাতীয় সবজিঃ

মূল জাতীয় সবজিগুলো শীতকালে পাওয়া যায়। গাঁজর, মূলা, ওলকপি, শালগম এসব সবজিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন ‘এ’ আছে। মূলা আলসার ও বদবজম দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া কিডনি ও পিত্ত থলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গাজরে উপস্থিত ক্যারোকিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। শীতের কারণে ত্বকের খসখসে ভাব দূর করে।

 

 কপিঃ

শীতের টাটকা সবজির মধ্যে বাঁধাকপি বেশ উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন এবং খেতেও সুস্বাদু। খুব সবজেই কপি রান্না করা যায়। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ আছে। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

 

ব্রকোলি মকিঃ

সবজির বাজারে ব্রকোলি মকি এখনো অনেকের কাছেই অপরিচিত। কিন্তু স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে ব্রকোলি বেশ জনপ্রিয় বয়ে উঠছে। আঁশযুক্ত এই সবজির মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ ও ‘কে’।

 

 শাকঃ

বিভিন্ন ধরনের শাক শীতকালে পাওয়া যায়। পালং শাক ও লাল শাক লৌবসমৃদ্ধ শাক। এ কারণে এই শাক রক্তস্বল্পতায় বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়া লাল শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ক্যালসিয়াম থাকে।

 ওটমিলঃ

ওটমিল শুধু সুবিধাজনক ব্রেকফাস্ট নয়। এর পুষ্টিগুণও অনেক। শীতের সময় আমাদের অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন। তাই শীতের সময় ব্যাকি খুবই উপকারী। ওটমিল শীতের জন্য আমাদের শরীরের জন্য যে অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন তা সরবরাব করতে সাহায্য করে।

স্যুপঃ

শীতের সময় স্যুপ একদম সঠিক খাবার। গরম গরম স্যুপ খেলে যেমন শীতের ঠাণ্ডা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তেমনি বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি করা স্যুপ শরীরের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ করবে। আমি স্যুপে একটু মুরগির মাংস দিয়ে দেখুন স্বাদও বেড়ে যাবে।

 

সর্বোপরি শীতের প্রতিটি সবজিতেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল থাকে। তাই সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য শীতকালে এ সকল শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ।

শীতকালে ভিটামিন ‘সি’

শীতে গা চিটচিটে ভাব, বিবর্ণতা। সব মিলিয়ে শরীর যেন শুকিয়ে যেতে চায়। এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে বেশি করে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খান। আর শীতকালের খাবার মেন্যু অবশ্যই হালকা হওয়া চাই। মনে করে প্রতিদিনই নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ খান। শুধু শীতকালেই নয়, বছরজুড়েই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন ‘সি’। এছাড়া ক্লান্তি ও দুর্বলতা কমাতেও কাজে লাগবে এই খাদ্যাভ্যাস। গ্রিল করা খাবার : এ ধরনের রান্না স্বাস্থ্যসম্মত এবং বছরের যেকোনো সময়ই তা খাওয়া যেতে পারে। তবে শীতের খাবার মেন্যুতে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে পারে গ্রিল করা খাবার। আপনার রান্নাঘর আর ডাইনিং টেবিলে গ্রীষ্মকালের বারবিকিউর আবহটা শীতকালেও দারুণ মানিয়ে যাবে। ফল, সালাদ, হালকা খাবার খান : শীতের সময় বা ঠা-ার মাসগুলোতে আমাদের খাদ্যগ্রহণের পরিমাণও যেন বেড়ে যায়, বিশেষত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের চাহিদা। আমরা এ সময় ক্যালরিও গ্রহণ করি বেশি। এতে আমাদের ওজনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তার চেয়ে ফল আর সালাদ খেয়ে কাটানো গরমের দিনগুলোর দিকেই ফেরার চেষ্টা করা আখেরে ভালো ফল দেয়। এ মৌসুমে শীতকালীন সবজি আর ফলমূলও অনেকটা সহজলভ্য আর দামেও কম। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা চাই মৌসুমি শাক-সবজি আর তাজা ফল।


Comments are closed.