boroi-বরই

বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র, সর্বপ্রকার মাটিতেই বরই গাছ জন্মে। একটু ডিম্বাকৃতির বরইকে সচরাচর “কুল” বলে অভিহিত করা হয়। এই ফলকে অনেকে অবেহেলার চোখে দেখলেও বরইয়ের উপকারিতা অপরিসীম।

 

বরই গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের ঝোপাল প্রকৃতির বৃক্ষ। বরই গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১২-১৩ মিটার। এই গাছ পত্রঝরা স্বভাবী অর্থাৎ শীতকালে পাতা ঝরে, বসন্তে নতুন পাতা আসে। বরই গাছের ডাল-পালা ঊর্ধ্বমুখী। বৎসরের সেপ্টেম্বরে – অক্টোবরে মৌসুমে গাছে ফুল আসে। ফল ধরে শীতে।

 

ফল গোলাকার, ছোট থেকে মাঝারি। ফল আকারে ছোট, কমবেশী ২.৫ সেন্টিমিটার। ফল পাকলে রঙ হলুদ থেকে লাল বর্ণ হয়। কাচা ও পাকা উভয় পদের বরই খাওয়া হয়। স্বাদ টক ও কাঁচামিঠা জাতীয়। বরই রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। বরই এর বিভিন্ন ধরনের আচার পাওয়া যায়। টক, ঝাল বা মিষ্টি সবই আমাদের পছন্দ।

কিন্তু কখনো কি জানার চেষ্টা করেছেন যে ছোট্ট গোলগাল এই ফলটি আপনার শরীরের জন্য কতটা উপকারী?

চিকিৎসকরা প্রায় সবসময় বলে থাকেন- বিদেশি ফলের চেয়ে দেশি মৌসুমি ফল নিরাপদ এবং এতে রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। রক্তরোগ, ক্যান্সারসহ জটিল কয়েকটি রোগ থেকে বাঁচতে মৌসুমে বেশি করে বরই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ফলটি খেতেই শুধু অতুলনীয় নয় পুষ্টিগুণেও সেরা।

প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী বরইয়ে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৭৯ কিলোক্যালরি, শর্করা ২০.২৩ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, আমিষ ১.২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৭৭.৮৬ গ্রাম, ভিটামিন এ ৪০ আইইউ, থায়ামিন ০.০২ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.০৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৪৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ ০.০৮৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৫০ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম, জিংক ০.০৫ মিলিগ্রাম।

এই ফলটি আপনার শরীরের জন্য কতটা উপকারী?

চলুন একটু জেনে নেই বরইয়ের উপকারিতাঃ 

ক্যান্সার প্রতিরোধ: বরই এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিদ্যমান, যারা টিউমারের উপর সাইটোটক্সিক প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

রক্ত পরিশুদ্ধি: শুকনো বরই এর মধ্যে স্যাপোনিন, অ্যাল্কালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড উপাদান থাকে যারা রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

দুশ্চিন্তা: এরা অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা দুর করে।

ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা: ইনসোমনিয়া এবং দুশ্চিন্তা অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়। বরই এর শক্তিশালী কেমিক্যালগুলো অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: এর ভেতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

লিভারের সুরক্ষা: শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলো লিভারের ক্ষতি করে। বরই এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: বরইতে ফ্যাট নাই বললেই চলে। ২ আউন্স (প্রায় ৪টি) বরই খেলে শরীরে ৪৪ ক্যালরি শক্তি যোগান দেয়, কিন্তু ফ্যাট প্রায় শূন্য। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও এরা সাহায্য করতে পারে।

হাড় মজবুত করে: এই ফলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি সহ আরো অনেক ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায় যা হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।

রক্ত সঞ্চালন: আয়রন ও ফসফরাস শরীরে রক্ত উৎপাদন এবং রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও বিভিন্ন দেশে পেটের সমস্যা দূর করতে, মাংসপেশি শক্তিশালী করতে এই ফলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেহেতু বরইয়ের উপকারিতা অনেক তাই এই দেশি ফল বেশি বেশি খান, আর বরই সারা বছর পাওয়া যায়না। তাই রইয়ের আচার হতে পারে বিকল্প।


No comments so far.

Leave a Reply