বরই, বড়ই বা কুল আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটা ফল। যদিও এর আদি নিবাস আফ্রিকা, তবু বাংলাদেশে তো বটেই এটি পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল পরিচিত একটি ফল। মজার ব্যাপার হলো বরই-এর সরাসরি কোনো ইংরেজি নাম নেই! তবে সাধারণত একে Jujube বা Chinese date নামে ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ziziphus zizyphus। আমাদের দেশে ডিম্বাকার বরইকে সাধারণত ‘কুল বরই’ বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Zizyphus mauritiana। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই, সব ধরনের মাটিতে বরই গাছ জন্মে। বরই গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের ঝাঁকড়া ধরনের বৃক্ষ। বরই গাছ সাধারণত ১২-১৩ মিটার লম্বা হয়। এই গাছ পত্রঝরা স্বভাবের অর্থাত্‍ শীতকালে পাতা ঝরে এবং বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গাছে ফুল আসে এবং ফল ধরে শীতকালে। কাঁচা ফল সবুজ। তবে পাকলে হলুদ থেকে লাল রং ধারণ করে। কাঁচা ও পাকা দু ধরনের বরই-ই খাওয়া যায়। স্বাদ টক ও টক-মিষ্টি ধরনের। তবে কুল বরই মিষ্টি হয়। বরই শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। বরই এর বিভিন্ন ধরনের আচার পাওয়া যায়। টক, ঝাল বা মিষ্টি সবই আমাদের পছন্দ। বরইয়ের রয়েছে ব্যাপক পুষ্টিগুণ।

প্রতি ১০০ গ্রাম বরইয়ে রয়েছে:

খাদ্যশক্তি- ৭৯ কিলোক্যালরি, শর্করা- ২০.২৩ গ্রাম, চর্বি- ০.২ গ্রাম, আমিষ- ১.২ গ্রাম, জলীয় অংশ- ৭৭.৮৬ গ্রাম, ভিটামিন এ- ৪০ আইইউ, থায়ামিন- ০.০২ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০৪ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬- ০.০৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি- ৬৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২১ মিলিগ্রাম, আয়রন- ০.৪৮ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম- ১০ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ- ০.০৮৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস- ২৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম- ২৫০ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম- ৩ মিলিগ্রাম, জিংক- ০.০৫ মিলিগ্রাম।

 

কিন্তু কখনো কি জানার চেষ্টা করেছেন যে ছোট্ট গোলগাল এই ফলটি আপনার শরীরের জন্য উপকারি।

১) ক্যান্সার প্রতিরোধ

বরই এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিদ্যমান, যারা টিউমারের উপর সাইটোটক্সিক প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।তাই বরইয়ে আচার খেতে পারেন।

২) রক্ত পরিশুদ্ধি
শুকনো বরই এর মধ্যে স্যাপোনিন, অ্যাল্কালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড উপাদান থাকে যারা রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

৩) দুশ্চিন্তা
এরা অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা দুর করে।

৪) ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা
ইনসোমনিয়া এবং দুশ্চিন্তা অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়। বরই এর  আচারে শক্তিশালী কেমিক্যালগুলো অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। তাই ঘুমের ঝামেলা হলে বরই এর আচার খেয়ে দেখুন এর যাদু!

৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বরইয়ের  ভেতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৬) লিভারের সুরক্ষা
শরীরের ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলো লিভারের ক্ষতি করে। বরই এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে।

৭) ওজন নিয়ন্ত্রণ
বরইতে ফ্যাট নাই বললেই চলে। ২ আউন্স (প্রায় ৪টি) বরই খেলে শরীরে ৪৪ ক্যালরি শক্তি যোগান দেয়, কিন্তু ফ্যাট প্রায় শূন্য। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও এরা সাহায্য করতে পারে।

৮ ) হাড় মজবুত করে
বরই এর ফলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি সহ আরো অনেক ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায় যা হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।

৯) রক্ত সঞ্চালন
আয়রন ও ফসফরাস শরীরে রক্ত উৎপাদন এবং রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও বিভিন্ন দেশে পেটের সমস্যা দূর করতে, মাংসপেশি শক্তিশালী করতে এই ফলের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

 


No comments so far.

Leave a Reply