বোম্বাই মরিচ কতটা উপকারি

বোম্বাই মরিচ , মরিচের একটি প্রজাতি যা প্রচন্ড ঝালের জন্য পরিচিত। নাগা মরিচ সহ অন্যান্য আরো অনেক নামে এই মরিচ টি পরিচিত। কেউ কেউ এটি কে ফোটকা মরিচ হিসেবে ও জানেন। অনেকেই একে ভুত মরিচ বলে ডেকে থাকেন এর প্রচন্ড ঝালের কারনে। ঝালটা যদি পরিমাপ  করা হয় তাহলে এর মান  দাঁড়ায় (১০+++)। আজ জানবো বোম্বাই মরিচ কতটা উপকারি ।

উৎপাদনঃ

এশিয়া মহাদেশে ভারত , শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের অনেক জায়গায় এই বোম্বাই মরিচের চাষ করা হয়  ।  বাংলাদেশের সিলেট এবং বরিশালে এই মরিচ বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে ।

চাষ প্রক্রিয়াঃ

বোম্বাই মরিচ শীত ও গ্রীষ্ম এই দুই ঋতুতেই বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা যায় । প্রাথমিক অবস্থায় হালকা বৃষ্টি এবং ফসল পরিপক্ক হবার সময় কিছু বৃষ্টি হলে তা মরিচের ভালো ফলনের পক্ষে মানানসই হয় । অতিবৃষ্টি বা খরা দুটোই এই মরিচের জন্য ক্ষতিকর । বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা ছাড়াও , সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে এই মরিচ বাড়িতে টবেও চাষ করা যায় । চারা লাগানোর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই ফুল ধরে এবং এর ১ মাসের মধ্যেই মরিচ খাবারের উপোযোগী হয় । কাঁচা মরিচ যেমন বেশি ছোট অবস্থায় ঝাল থাকে না ,বোম্বাই মরিচের কিন্তু ছোট অবস্থায় ও ঝাল অনেক বেশি থাকে এবং সুগন্ধিতে ভরিয়ে রাখে ফল দেয়ার শুরুর থেকেই ।

মরিচের পুষ্টিগুনঃ

স্বাদে প্রচণ্ড ঝাল হলে ও মরিচের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ । এতে রয়েছে ক্যাপসাইসিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন , আছে ভিটামিন “এ” এবং ভিটামিন “সি”। আরও আছে প্রচুর পরিমানে আয়রন।

 

বোম্বাই মরিচ কতটা উপকারিঃ 

  • এটি পরিপাকতন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সরিয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে ও বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ক্যাপসেইসিনের ভূমিকা আছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভালো।
  • হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির স্নায়ুগুলো ক্যাপসেইসিনে সংবেদনশীল। এই স্নায়ুগুলোর সুস্থতায় ভূমিকা রাখে এই উপাদান।
  • মরিচ ভিটামিন এ, বি, সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, রাইবোফ্ল্যাভিন ইত্যাদির ভালো উৎস।
  • ক্যাপসেইসিন একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও রক্তনালিতে চর্বি জমতে বাধা দেয়।
  • মানুষের বুদ্ধির বিকাশে, লোহিত কণিকার গঠনে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, হৃদরোগের ঝুঁকি প্রতিরোধে, সর্দি ও পেট ব্যথা উপশমে, চোখের জ্যোতি বাড়াতে মরিচের উপকারিতা অপরিসীম।
সংগ্রহঃ

সিলেটে উৎপাদিত মরিচ এখন রপ্তানি হচ্ছে বানিজ্যিক ভাবে । আমরা চলে যাই সেখানে । হাট থেকে বাছাই করে নিয়ে আসি সাইজে সব চেয়ে বড় এবং হৃষ্টপুষ্ট মরিচ ।

উপাদানঃ

চুইঝালের তৈরি বোম্বাই মরিচের আচারে কোন প্রকার ক্ষতিকারক ক্যামিকেল নেই । এর মধ্যে রয়েছে – বাছাইকৃত বোম্বাই মরিচ ,রসুন ,শুকনো মরিচের গুড়ো ,পাঁচ ফোড়নের গুড়ো ,টক স্বাদের জন্য তেতুল ,আম অথবা জলপাই ।

বোম্বাই মরিচের আচারের উপকারিতাঃ

এই আচার টির মজাদার স্বাদের সাথে সাথে এর মধ্যে রয়েছে বহুমুখি উপকারিতা । ৩৭০ ডিগ্রীর কম তাপে এই আচার বানানো হয় তাই এর পুষ্টিগুন অটুট থাকে । এর মধ্যে কোন ক্ষতিকারক ক্যামিকেল না থাকার কারনে এর স্বাস্থ্যগত উপকার অনেক বেশি।

গর্ভাবস্থায় মহিলারা আচার খেতে পছন্দ করেন । বর্তমানের ভেজালের যুগে কারখানায় উৎপাদিত আচারের মান সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েন অনেকেই । চুইঝালের আচার গুলো সম্পূর্ণ ঘরোয়া ভাবে তৈরি  হওয়ার কারনে এটি শতভাগ বিশুদ্ধ । কোন ক্ষতিকারক ক্যামিকেল না থাকার কারনে এর স্বাস্থ্য ঝুকি নেই।

শুধু গর্ভবতীরাই নয় , যে কোন বয়সের মানুষ এটি খেতে পারবেন  । এমনকি , ডায়াবেটিক বা উচ্চ রক্ত চাপের রোগীরাও এই আচার নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন । বোম্বাই মরিচ কতটা উপকারি ।


No comments so far.

Leave a Reply